
ঢাকা, ২৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচার ও বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতার লড়াই। এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি নতুন দেশের, নাম তার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আজ ৫৫তম মহান স্বাধীনতা দিবস। এটি গৌরবময় জাতীয় দিবসও। দিনটি উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। ভোর থেকেই দলে দলে ফুল, ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ বেদী। এ সময় অনেককে লাল-সবুজের পোশাক পরে আসতে দেখা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সকাল ৬টা ১১ মিনিটে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর শ্রদ্ধা জানান বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শ্রদ্ধা জানান উপদেষ্টামণ্ডলী ও বিদেশি কূটনীতিকরাও। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাতীয় স্বার্থে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা ঐকমত্য পোষণ করব। কিন্তু একেকজন মানুষের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। সেসব দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়গুলো কমিয়ে আনতে কিছুটা সময় তো লাগবেই। একটা সরকারের জন্য গতানুগতিক কিছু চ্যালেঞ্জ তো থাকেই। তবে এখন একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য গড়া। সেটা অবশ্যই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটাকে চ্যালেঞ্জ বলেন আর না বলেন, একটা প্রক্রিয়া তো বটেই। আমাদের জন্য ওটাতে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে একটা বড় বিষয় বলে আমি মনে করি। আরেকটা হচ্ছে- নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করে দেওয়া, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা।
রাজনৈতিক দলগুলো সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকেই প্রধান্য দেবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেকের চেয়ে তারা তো আরও অনেক বেশি অভিজ্ঞ। ফলে আমি মনে করি জনগণকে আস্থায় যদি আনতে হয়, তাহলে যে সংস্কারগুলোর দাবি জনগণের ক্ষেত্রে ওঠে, সেগুলোর বিষয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। সবসময় জনগণের মতামতের সঙ্গেই আছি। আমরা তাদের জন্যই কাজ করছি।
এ সময় স্বাধীন ভূখণ্ডে এ দেশের মানুষ আর পরাধীন বোধ করবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ৭১-এ দেশকে জন্ম দিয়েছেন, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে স্বাধীনতার যে কনসেপ্ট সেটাকে নষ্ট করে দিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক যতক্ষণ না মনে করবে সে স্বাধীন, তার বাক স্বাধীনতা আছে, তার ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভূখণ্ড স্বাধীন হয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা মনে করি, ২৪ সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছে। এই স্বাধীনতা সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। আর কখনোই একটি স্বাধীন ভূখণ্ডে এ দেশের মানুষ আর পরাধীনতা বোধ করবে না।