
কুয়েত সরকার শিশুদের অধিকার রক্ষা এবং পারিবারিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করেছে। এই সিদ্ধান্তটি দেশটির বিচারমন্ত্রী নাসের আল সুমাইত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে কুয়েতে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছিল ১৫ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৭ বছর। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিবর্তনটি শিশুদের অধিকার সুরক্ষা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কুয়েতের বিচারমন্ত্রী নাসের আল সুমাইত জানান, ২০২৪ সালে দেশটিতে ১ হাজার ১৪৫টি বাল্যবিবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। এই সংখ্যা উদ্বেগজনক হওয়ায় সরকার শিশুদের সুরক্ষা এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কুয়েতে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিয়ের আগে স্বামী-স্ত্রীর মানসিক ও সামাজিক পরিপক্কতা না থাকাই এসব বিচ্ছেদের মূল কারণ। অপরিপক্ক বয়সে বিয়ে হওয়ায় দম্পতিরা পারিবারিক দায়িত্ব ও সম্পর্কের জটিলতাগুলো সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, যা শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
কুয়েত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে শিশু অধিকার সংগঠন এবং সামাজিক কর্মীরা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপটি শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়নের পথ সুগম করবে। এছাড়াও, এটি বাল্যবিবাহের মাধ্যমে সৃষ্ট সামাজিক সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করবে।
বিশ্বের অনেক দেশেই বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কুয়েতের এই সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অর্জনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কুয়েত সরকার এই আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। স্কুল এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা, প্রশিক্ষণ এবং প্রচারণার মাধ্যমে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে মানুষকে জানানো হবে। এছাড়াও, আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
কুয়েতের সাধারণ জনগণও এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। অনেক অভিভাবক মনে করছেন, এই পদক্ষেপটি তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে এবং তাদের শিক্ষা ও ব্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ বাড়াবে।
কুয়েত সরকারের এই সিদ্ধান্তটি শিশু অধিকার রক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু কুয়েতেই নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। শিশুদের সুরক্ষা এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ আরও অনেক দেশ গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।