ঢাকা ১১:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারলেই মিলবে ১৫ লাখ! অভিনব প্রতারণার ফাঁদ

  • Reporter Name
  • Update Time : ১০:১৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 25

 

 

অনলাইন ডেস্ক ঃ

নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারলেই মিলবে ১৫ লক্ষ! অভিনব প্রতারণার ফাঁদের এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের বিহার রাজ্যের নওয়াদায়।

এতদিন ওটিপি জালিয়াতি, ডিজিটাল অ্যারেস্ট, ভুয়া বিনিয়োগের টোপ, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার জালিয়াতির ঘটনা ঘটত ভারতের ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলায়।

এ বার জালিয়াতির এক নতুন উপায় খুঁজে বার করেছেন সাইবার প্রতারকেরা। সেই জালিয়াতির আঁতুড়ঘর জামতাড়া নয়, প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের নওয়াদায়।

নতুন সেই জালিয়াতির এক নামও রয়েছে, ‘প্রেগন্যান্সি জব স্ক্যাম’। কিন্তু ‘প্রেগন্যান্সি’ মানে তো অন্তঃসত্ত্বা হওয়া। জৈবিক সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাইবার জালিয়াতির দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই! তা হলে কেন এ রকম নাম?

আসলে প্রতারণার জন্য কল্পনাতীত এক ফন্দি এঁটেছে নওয়াদার একটি দুষ্কৃতীদল। নিঃসন্তানদের অন্তঃসত্ত্বা করে দেওয়ার পরিবর্তে ১০-১৫ লক্ষ টাকার টোপ দিচ্ছে তারা।

যাঁরা সেই টোপ গিলছেন, তাঁদের অনেকেই নিজেদের সঞ্চয়টুকু খোয়াচ্ছেন। আর এ সব কিছুর সূত্রপাত একটি ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে। সেই বিজ্ঞাপনে বড় বড় করে লেখা, ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’। সহজ বাংলায় যার অর্থ— অন্তঃসত্ত্বা করার চাকরি।

বিজ্ঞাপনের এক পাশে এক মহিলার ছবিও থাকে। নীচে থাকে ফোন নম্বর। টাকা রোজগারের লোভ দেখিয়ে সেই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেইসব যুবকরা ফোন দেন যারা অর্থাভাবে ভুগছেন বা চাকরি খুঁজছেন। ফোন করার পরে তাদের টোপ দেওয়া হয়- যদি কোনও নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারেন, তা হলেই টাকা মিলবে। পাওয়া যেতে পারে ১৫ লক্ষ পর্যন্ত। তবে তার আগে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিতে হবে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারকদের পাতা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন যুবকেরা। যদি কেউ সন্দেহ করে প্রশ্ন তোলেন, তখন তাঁকে জন্মহার এবং নিঃসন্তান মহিলাদের দুঃখ নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা হচ্ছে, তখন তারা সহজেই বিশ্বাস করে নিচ্ছেন সব কিছু।

যুবকদের এ বলেও লোভ দেখানো হচ্ছে যে, যদি কেউ কোনও মহিলাকে অন্তঃসত্ত্বা করতে না-ও পারেন, তা হলেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ সব শুনেই টপাটপ টোপ গিলছেন একাংশ।

উল্লেখ্য, জালিয়াতির জন্য প্রতারকেরা ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’ নামে ভুয়ো ওয়েবসাইটও খুলেছে। ‘টার্গেট’-এর সঙ্গে কথা বলার পর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য ওই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন প্যান এবং আধার কার্ডের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এর পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি ভুয়ো হোটেলের ঠিকানা। সেখানে কামরা ভাড়া করে নিঃসন্তান কোনও মহিলার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।

এঁদের মধ্যে অনেকেই নিঃসন্তান মহিলার জন্য হোটেলে অপেক্ষা করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে তাঁরা প্রতারিত। আবার কেউ নিজের স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা করে যখন সেই নম্বরে কয়েক মাস ফোন করছেন, তখন দেখছেন সেই নম্বর বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

কিন্তু এই চক্রের মাথায় কারা বসে? পুলিশ জানিয়েছে, ওই চক্র যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬-২০ বছরের মধ্যে। নওয়াদার বিভিন্ন জায়গায় চালা বেঁধে বা মাঠে-ঘাটে বসে তাঁরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন। তাই এখন নওয়াদাকে ‘জামতাড়া ২.০’ নাম দিয়েছেন অনেকে।

অনেকেরই বাবা-মা জানেন না যে, তাঁদের সন্তান এ ভাবে অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আবার অনেকে জেনেও কিছু বলেন না। কারণ, তাঁদের চোখে সাইবার জালিয়াতি নাকি কোনও অপরাধ নয়।

ইতিমধ্যেই অদ্ভুত এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নওয়াদায় প্রিন্স রাজ, ভোলা কুমার এবং রাহুল কুমার নামে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

নওয়াদার ডিএসপি তখন জানিয়েছিলেন, সাইবার থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের। তারা নাদরিগঞ্জ থানার আওতাধীন কাউয়ারা গ্রাম থেকে প্রতারণাচক্র চালাচ্ছিলেন। তাঁরা নিঃসন্তানদের গর্ভবতী করার জন্য ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।

এর আগে ২০২৩ সালে নওয়াদা জেলায় একই রকম একটি প্রতারণাচক্রের পর্দা উন্মোচন করেছিল পুলিশ। তবে সূত্রের খবর, এই জালিয়াতি নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা এতই কম যে, অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ অধরাই থেকে যাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ৫ বছর বয়সী শিশুর কে যৌন নিপীড়ন অভিযোগ।

নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারলেই মিলবে ১৫ লাখ! অভিনব প্রতারণার ফাঁদ

Update Time : ১০:১৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

 

অনলাইন ডেস্ক ঃ

নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারলেই মিলবে ১৫ লক্ষ! অভিনব প্রতারণার ফাঁদের এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের বিহার রাজ্যের নওয়াদায়।

এতদিন ওটিপি জালিয়াতি, ডিজিটাল অ্যারেস্ট, ভুয়া বিনিয়োগের টোপ, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরনের সাইবার জালিয়াতির ঘটনা ঘটত ভারতের ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলায়।

এ বার জালিয়াতির এক নতুন উপায় খুঁজে বার করেছেন সাইবার প্রতারকেরা। সেই জালিয়াতির আঁতুড়ঘর জামতাড়া নয়, প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের নওয়াদায়।

নতুন সেই জালিয়াতির এক নামও রয়েছে, ‘প্রেগন্যান্সি জব স্ক্যাম’। কিন্তু ‘প্রেগন্যান্সি’ মানে তো অন্তঃসত্ত্বা হওয়া। জৈবিক সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাইবার জালিয়াতির দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই! তা হলে কেন এ রকম নাম?

আসলে প্রতারণার জন্য কল্পনাতীত এক ফন্দি এঁটেছে নওয়াদার একটি দুষ্কৃতীদল। নিঃসন্তানদের অন্তঃসত্ত্বা করে দেওয়ার পরিবর্তে ১০-১৫ লক্ষ টাকার টোপ দিচ্ছে তারা।

যাঁরা সেই টোপ গিলছেন, তাঁদের অনেকেই নিজেদের সঞ্চয়টুকু খোয়াচ্ছেন। আর এ সব কিছুর সূত্রপাত একটি ভুয়ো বিজ্ঞাপন দিয়ে। সেই বিজ্ঞাপনে বড় বড় করে লেখা, ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’। সহজ বাংলায় যার অর্থ— অন্তঃসত্ত্বা করার চাকরি।

বিজ্ঞাপনের এক পাশে এক মহিলার ছবিও থাকে। নীচে থাকে ফোন নম্বর। টাকা রোজগারের লোভ দেখিয়ে সেই নম্বরে ফোন করতে বলা হয়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেইসব যুবকরা ফোন দেন যারা অর্থাভাবে ভুগছেন বা চাকরি খুঁজছেন। ফোন করার পরে তাদের টোপ দেওয়া হয়- যদি কোনও নিঃসন্তানকে অন্তঃসত্ত্বা করতে পারেন, তা হলেই টাকা মিলবে। পাওয়া যেতে পারে ১৫ লক্ষ পর্যন্ত। তবে তার আগে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিতে হবে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতারকদের পাতা সেই ফাঁদে পা দিচ্ছেন যুবকেরা। যদি কেউ সন্দেহ করে প্রশ্ন তোলেন, তখন তাঁকে জন্মহার এবং নিঃসন্তান মহিলাদের দুঃখ নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা হচ্ছে, তখন তারা সহজেই বিশ্বাস করে নিচ্ছেন সব কিছু।

যুবকদের এ বলেও লোভ দেখানো হচ্ছে যে, যদি কেউ কোনও মহিলাকে অন্তঃসত্ত্বা করতে না-ও পারেন, তা হলেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ সব শুনেই টপাটপ টোপ গিলছেন একাংশ।

উল্লেখ্য, জালিয়াতির জন্য প্রতারকেরা ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’ নামে ভুয়ো ওয়েবসাইটও খুলেছে। ‘টার্গেট’-এর সঙ্গে কথা বলার পর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য ওই ওয়েবসাইটের লিঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন প্যান এবং আধার কার্ডের তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এর পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় একটি ভুয়ো হোটেলের ঠিকানা। সেখানে কামরা ভাড়া করে নিঃসন্তান কোনও মহিলার জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।

এঁদের মধ্যে অনেকেই নিঃসন্তান মহিলার জন্য হোটেলে অপেক্ষা করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছেন যে তাঁরা প্রতারিত। আবার কেউ নিজের স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা করে যখন সেই নম্বরে কয়েক মাস ফোন করছেন, তখন দেখছেন সেই নম্বর বন্ধ। অনেক চেষ্টা করেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

কিন্তু এই চক্রের মাথায় কারা বসে? পুলিশ জানিয়েছে, ওই চক্র যাঁরা চালাচ্ছেন তাঁদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬-২০ বছরের মধ্যে। নওয়াদার বিভিন্ন জায়গায় চালা বেঁধে বা মাঠে-ঘাটে বসে তাঁরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন। তাই এখন নওয়াদাকে ‘জামতাড়া ২.০’ নাম দিয়েছেন অনেকে।

অনেকেরই বাবা-মা জানেন না যে, তাঁদের সন্তান এ ভাবে অপরাধজগতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আবার অনেকে জেনেও কিছু বলেন না। কারণ, তাঁদের চোখে সাইবার জালিয়াতি নাকি কোনও অপরাধ নয়।

ইতিমধ্যেই অদ্ভুত এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নওয়াদায় প্রিন্স রাজ, ভোলা কুমার এবং রাহুল কুমার নামে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

নওয়াদার ডিএসপি তখন জানিয়েছিলেন, সাইবার থানায় দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের। তারা নাদরিগঞ্জ থানার আওতাধীন কাউয়ারা গ্রাম থেকে প্রতারণাচক্র চালাচ্ছিলেন। তাঁরা নিঃসন্তানদের গর্ভবতী করার জন্য ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।

এর আগে ২০২৩ সালে নওয়াদা জেলায় একই রকম একটি প্রতারণাচক্রের পর্দা উন্মোচন করেছিল পুলিশ। তবে সূত্রের খবর, এই জালিয়াতি নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা এতই কম যে, অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধ অধরাই থেকে যাচ্ছে।